নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই সাবানই তাে মাখে প্রভঞ্জন, কই, প্রভঞ্জনের গা থেকে তাে এরকম সুগন্ধ বের হয় না। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিল নাতাশাকে, বাথরুম থেকে আমি এলে ভালাে গন্ধ পাও ? নাতাশা বলে, ওয়াশরুমকে বাথরুম বলতে নিষেধ করেছি কতবার?
এটাও একটা ব্যাপার বটে। ছােটবেলায় কলতলায় স্নান করত প্রভঞ্জন। চৌবাচ্চায় মগ ডুবিয়ে। তখন মাঝেমধ্যেই লাইফবয় সাবান। স্নানঘরের বিবর্তনের কয়েকটি স্তর আছে।
কলতলা থেকে কলঘর, তারপর বাথরুম। বাথরুম। বাথরুমে আর চৌবাচ্চা নেই, শাওয়ার। তারপর টয়লেট। এখানে বেসিন থাকবে। টয়লেট আরও উন্নতি করলে ওয়াশরুম হয়। প্রভঞ্জন বাথরুম থেকে সােজা এসে পড়েছে ওয়াশরুমে। মধ্যবর্তী স্তরগুলাে অতিক্রম করতে হয়নি। আর নাতাশা বড়জোর টয়লেট স্তর থেকে ওয়াশরুমে। তাই ওর গায়ে সাবানের গন্ধ লেগে থাকে, প্রভঞ্জনের থাকে না।
প্রভঞ্জন নাতাশার কাছ থেকেই জানতে চেয়েছিল, ব্যাখ্যা পেতে চেয়েছিল, তাই শব্দ-সংস্কার করে বলল, হ্যাঁ, ওয়াশরুম। ওয়শরুম থেকে এলে আমার গায়েও কি…
বাক্যটা শেষ হবার আগেই নাতাশা বলে, কী করে হবে? সাবান মাখতেও জানতে হয়। সব কিছুতেই স্কুলিং লাগে।
সত্যিই তাে, সেই স্কুলিং প্রভঞ্জনের কোথায় ? লাল সাবান মাখত ছােটবেলায়। পরে সাদা সাবানে প্রমােশন। ছ’জনের সংসারে মাসে দুটো বরাদ্দ। ক্ষয়ে এত্তটুকু হয়ে গেলে হেগে শােচাবার সাবান। প্রভঞ্জনের বাবা ছিল এক মাড়ােয়ারি ব্যবসাদারের কেরানি। বাটি করে গুড়-রুটি নিয়ে কাজে যেত। ভাইবােন চারজন। সবাই বাংলা মিডিয়াম। প্রভঞ্জন বড় ছেলে। কিন্তু লেখাপড়ায় বড় বেশি রকম ভালাে। এম এসসি ফার্স্ট ক্লাস। স্কলারশিপ নিয়ে পি এইচ ডি। বিদেশে যায়নি, একটু ভীতু টাইপের ছেলে।
প্রভঞ্জন কলেজে পড়ানাের চাকরি পেয়েছিল। চার বছর চাকরির পর কলঘর থেকে বাথরুম। ভাড়াবাড়ি ছেড়ে একটা ফ্ল্যাটে। দু’কামরার। বেশ কিছু টাকা হাউস বিল্ডিং লােন নিল। বােনটা বি এ পাশ করে ডি টি পি শিখে একটা পাঠ্যবই প্রকাশকের কাছে চাকরি পেল এবং কিছুদিনের মধ্যেই ওখানকার প্রুফরিডারকে বিয়ে করে ফেলল। প্রভঞ্জন খুশিই হল। প্রুফরিডাররাও তাে সরস্বতীর সেবক।
এর পরও আরও দুটো বােন আছে প্রভঞ্জনের। বাবা-মা বলল, এবার বিয়ে করে ভানু, তাের বাপ তাে পারে না এসব, কাগজে দে, নয় পেরেমপ্রীতি করে নে আয় একটা বউ।
প্রভঞ্জন ল্যাবা কার্তিক। এটা ওর বউ বলে। ল্যাবার সঙ্গে কার্তিক কেন ট্যাগ করা? কার্তিক কত স্মার্ট। তীর ছোঁড়ে। কে জানে এখানে কী গল্প আছে, কিন্তু অঙ্কে মেলে না।
বিজ্ঞাপন দিয়েছিল পাত্র একত্রিশ, গণিতশাস্ত্রে ডক্টরেট, অধ্যাপক…।
নাতাশার বাবা পুলিশকর্তা। বি ডি আর নামে খ্যাত। মানে ভবদেব রাহা। অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে পুলিশে ঢুকেছিলেন, কয়েকটা
প্রমােশন পেয়েছেন। প্রতিটি প্রমােশনের সঙ্গে সঙ্গে কেতা এবং ভুড়ি বেড়েছে।
প্রভঞ্জনের সঙ্গে ভবদেববাবুর এরকম কথাবার্তা হয়েছিল।
প্রভঞ্জন। আমার কিন্তু ছােট ফ্ল্যাট। দুটো মাত্র ঘর। একচিলতে লিডিং স্পেস। আপনার মেয়ে…
ভবদেব।। ধুর, ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য ফ্ল্যাট কিনে রেখে দিয়েছি অলরেডি। ইলেভেন হানড্রেড স্কোয়ারফুট। উইথ গ্যারাজ। নাকতলায়। মেট্রো স্টেশন ফাইভ মিনিটস।
প্রভঞ্জন।। আপনি আপনার মেয়েকে যেভাবে বড় করেছেন, আমি তাে সেভাবে বড় হইনি, আমি তাে বেগুন পােড়া খেতে পছন্দ করি, ভালাে জামাকাপড় কিনতে লজ্জা করে…
ভবদেব।। ওহ বেগুন পােড়া? দারুণ খাবার। ডেলিসাস। কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজকুচি ধনেপাতা দিয়ে। আর ছেড়া জামাপ্যান্টই তাে আজকালকার ফ্যাশন। আমার মেয়েও তাে খুঁজে খুঁজে ঘেঁড়া-ফাটা জিনস কিনে আনে।
প্রভঞ্জন।। আপনি বললেন আপনার মেয়ে খুব হাসিখুশি, খুব গল্প করতে ভালােবাসে। আমি কিন্তু একটু ইয়ে টাইপের। চুপচাপ। অঙ্কটা খুব ভালােবাসি। সময় পেলেই কঠিন কঠিন অঙ্ক সম্ভ করি। আমার কাছে স্কলাররা আসে, ওরা সব অঙ্ক করে তাই..।
ভবদেব।। বুঝেছি, বুঝেছি। একেবারে অঙ্কের কারখানা। এ ফ্যাক্টরি অফ ম্যাথমেটিকস। আর এটাই তাে চাই। আমার বাবা ছিলেন অঙ্কে কাঁচা। যােগে ভুল করে একটা সম্পত্তি হাতছাড়া করে ফেললেন। আমিও কাঁচা। তােমার কাছে গােপন করব কেন, তুমি তাে ছেলের মতােই। ইস্কুলে
অঙ্কে ফেল করতাম। যা হােক করে পুলিশে চাকরিটা হল। এই চাকরিতে টাকাপয়সাটার হিসেব করতে হয়। সিক্স পার্সেন্ট ওর কাছে, এইট পার্সেন্ট তার কাছে, ক্যালকুলেটর ছাড়া একদম পারি না। আমার মেয়েটাও হয়েছে আরও কাঁচা। ওকে গােয়া থেকে একটা বিউটিফিকেশন কোর্স করিয়ে এনেছি। একটা বিউটি পার্লার কাম স্পা করে দিয়েছি যােধপুর পার্কে। ছ’জন বিউটিশিয়ান কাজ করে। রােজগার পাতি ভালােই। কিন্তু অঙ্কে কাঁচা বলে সবাই ওকে ঠকায়। সত্যি কথা বলতে কী, আমি আমাদের বংশটায় একটু অঙ্ক এনে দিতে চাই। একটা অঙ্কের জিন যদি ঢুকে যায়, মানে, বলতে চাইছি, আমাদের নাতিনাতনিরা যদি তােমার দয়ায় আমার বংশ যদি একটু অঙ্ক পায় তবে একটু ব্রেক থু হয়।
প্রভঞ্জন।। কিন্তু আমার বাবা-মা…
ভবদেব।। আরে তােমার বাবা-মা তাে আমারও বাবা-মা… সরি, আমারও দাদা-বৌদি।
প্রভঞ্জন।। কিন্তু ওঁদের ছেড়ে আমি কী করে…
ভবদেব।। আরে ছাড়বে কেন? তােমাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে চলে এসাে। থ্রি বেডরুম তাে।
প্রভঞ্জন।। কিন্তু আপনার মেয়েকে কি আমি ভালাে ভালাে খাবার খাওয়াতে পারবাে? আমরা তাে…।
ভবদেব।। সে সব ভেবাে না। ও তাে খুব ফিগার কনশাস। সকালে একটু ভেজানাে মুগডাল, শশা-শাঁকালু, রাত্রে রুটি-সবজি। বাড়িতে তাে এটুকুই খাবে। খুব সস্তার খাবার। আর দুপুরে ও নিজের পার্লারের নিজের চেম্বারেই লাঞ্চ করে নেয়, ওই সব বার্গার, পিৎজাটিৎজা।
প্রভঞ্জন।। আমি যে এখনও গুড়-রুটি খাই।
ভবদেব।। আরে গুড় তাে দারুণ জিনিস। চিনি তাে বিষ। আমাদের অঞ্চলের দোকানগুলােতে গুড় পাই না বলে খাইনা। আর রুটিই তাে আসল খাবার। লাল আটার রুটি।।
প্রভঞ্জন।। স্যার, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি একটা স্মার্ট, সুন্দরী ফাটা জিনস পরা মেয়ের কপাল ফাটাতে পারব না। আমাকে বাঁচান।
ভবদেব ।। না বাবা, ফাটাবে কেন? আমাদের বংশের ফাটা কপালটা জোড়া দেবে। কথা দাও, জোড়া দেবে?
প্রভঞ্জন।। কীভাবে বংশের কপাল ফেটে গেল? বংশ মানে বাঁশ না? বাংলাটা জানি না ভালাে। অঙ্কই তাে…
ভবদেব।। কপাল ফাটাল তাে অঙ্ক। আমি তিনপুরুষের কথা বললাম, আসলে গত চোদ্দ পুরুষ আমাদের বংশ অঙ্কে কাঁচা। আমাদের বংশে একটা অঙ্কের জিন ইয়ে করাতে চাই। বলাে, অঙ্ক ছাড়া এ যুগে কিছু হয় ? আমাদের বংশে কোনও ডাক্তার নেই, ইঞ্জিনিয়ার নেই, বিজ্ঞানী নেই, আই এ এস নেই, ডব্লু বি সি এস নেই…। কী করে থাকবে? সর্বত্রই তাে ওই অঙ্ক। ডাক্তারিতে নেই হয়তাে, কিন্তু সায়েন্স নিয়ে হায়ার। সেকেন্ডারি পড়াে, তারপর তাে জয়েন্ট দেবে। আই এ এস, ডব্লু বি সি এস, সর্বত্র অঙ্ক। বিচ্ছিরি গ্যাড়াকল। এক তান্ত্রিক জ্যোতিষীর কাছে আমি যাই, আমার ওয়েল উইশার। উনিই আমার দুষ্ট গ্রহ সামলান। এই দ্যাখাে কত আংটি। আবার উপদেশও দেন। উনি বললেন, নামের আগে প্র’ আছে এমন এক সুপাত্রের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দেও, সে যদি গণিতবিদ হয় তবে অতি উত্তম, আর কন্যার বাম বাহুতে ব্রহ্মগুপ্ত ক্যালকুলাস ধারণ করিয়ে দেবেন, ব্যাস, দেখতে হবে না, বংশে অঙ্কের সঞ্চার হবে। ভগবান জুটিয়ে দিয়েছেন তােমাকে। না কোরাে না বাপ। আমার মেয়েকে তাে দেখলে সেদিন, কেমন ফর্সা, গালে টোল, পটলচেরা চোখ, একটা চোখ যখন টুক করে বুজে দেয়, আর একটা খােলা রাখে, তখন যা লাগে না… নিজের মেয়ে, কী আর বলব।
প্রভঞ্জন।। তা, আপনার মেয়ের চোখের ভ্রুতে পুঁতি গোঁজা কেন? আর চুলের রঙই বা একটু বেগুনি, একটু সবুজ কেন? আমার কেমন ভয় করছিল।
ভবদেব।। আরে বাবা, ওগুলাে নাকি স্টাইল। তােমার যদি ভালাে না লাগে ওসব ছেড়ে দেবে। ও একটু সাজগােজ করে বটে, কিন্তু শিবরাত্তিরের উপােস করে। ওর মায়ের মতােই পতিভক্ত। তােমার বাড়িতে কবে কথা বলব বল প্রভঞ্জন।
প্রভঞ্জন।। যেতে পারেন, চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন হবে। গেলেই আর আপনারা এগােবেন না।
তিন
বিয়েটা হয়েই গিয়েছিল শেষ অব্দি। প্রভঞ্জনের মা চেয়েছিল ছেলের সুখ। বড়লােক শ্বশুরের দেয়া বড় ফ্ল্যাটে ছেলে সুখে থাকুক। আর ভবদেববাবু কয়েছিলেন, আপনার মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা করবেন না বেয়াইন ঠাকুরন।
এলাহি বন্দোবস্ত করে বিয়ে। গেটে পাগড়ি পরা দারােয়ান, গােলাপের পাপড়ি পড়ছে উপর থেকে, কত রঙের আলাে, কত খাবারদাবার, অঙ্কের এত মাহাত্ম্য জানা ছিল না প্রভঞ্জনের। বিয়ের পর পরই চলে গেল নতুন ফ্ল্যাটে। রান্নার লােক আছে, বাসন মাজা ঘর মােছা এসবের আলাদা লােক। সবার মাইনেই প্রভঞ্জনের শ্বশুর মেটায়।
রান্নার লােক জিজ্ঞাসা করে যায়, কী খাবেন বাবু? এক হাতে নােটবই, পেনসিল ও হাতে। প্রভঞ্জন বলে, চারামাছের ঝােল আর বেগুন পােড়া। রান্নাবাবু বলে, একদিন একটু কোর্মা বলুন স্যার, মাটন রােগনজুস, আমরাও তবে একটু খাই।
বিছানার চাদর রােজ পাল্টানাে হয়। এটাই হুকুম। বিছানার চাদর একটু কুঁচকে না থাকলে বাড়ি মনে হয় না। আর এত নরম বিছানায় ঘুমও হয়
না। শেষ অব্দি ডবল খাট দু’ভাগ হল। প্রভঞ্জনের বিছানার চাদর পাল্টানাে মাসে একদিন। নাতাশা বলল, আমার ভাল্লাগছে না। একই ঘরে এই কূলে আমি ওই কূলে তুমি চলবে না।
প্রভঞ্জন বলে, আমি তবে অন্য ঘরে যাই? নাতাশা প্রভঞ্জনকে জড়িয়েটড়িয়ে, ওর গায়ের সুগন্ধ বিলিয়েটিলিয়ে, ওর ঠোটের লিপস্টিক প্রভঞ্জনের গালে লাগিয়েটাগিয়ে বলে, তাই আবার হয় নাকি? যাঃ! আমার একটা অঙ্ক বেবি চাই না। ঠিক আছে, আমিও না হয় তােমার দাবি মেনে আমার গদি ছেড়ে দিলাম। আমিও না হয় তােশকে শােব। আমাদের বিছানার চাদরও পাল্টানাে চলবে না। খাট জোড়া লাগুক। নাতাশা গাড়ি চালায়। প্রভঞ্জন কাঁচুমাচু হয়ে নাতাশার পাশে সিট বেল্ট বেঁধে বসে থাকে। নাতাশা কতদিন বলেছে, যখন গাড়িটা চালাই, হাঁদারাম হয়ে বসে থাকো কেন? দেখতে পারাে না কীভাবে চালাই, কখন ক্র্যাচ, কখন ব্রেক, গিয়ার, কীভাবে একসেলেটর…। প্রভঞ্জন একসেলারেশনের অঙ্ক করায়। গিয়ারের মেকানিজম জানে। গতির তত্ত্ব জানে, গতিবেগের অঙ্কও করাতে হয়, কিন্তু গাড়ি চালানাে শিখতে ঝামেলা ঝামেলা লাগে, না কি ভয় ভয় করে। বউ যখন গাড়ি চালায়, প্রভঞ্জন পাশে বসে বউয়ের। সােনালি রুপােলি নেলপালিশে সাজানাে আঙুল কেমন স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে খেলা করছে ভােদার মতাে দেখে। নাতাশা বলে, ব্যাটাছেলে হয়ে তুমি চুপ করে বসে থাকো, আর তােমার বউ তােমাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়- এটা তােমার ভালাে লাগে?
প্রভঞ্জন বলে, গাড়িতেই চড়তে ভালাে লাগে না, আমার বাসই ভালাে। বউ চালাচ্ছে বলে আলাদা করে খারাপ লাগবে কেন?
এখন মেয়েরা সব কাজ করে। আগে তাে মেয়েরা খুব একটা ম্যাথমেটিকস পড়তে আসত না, এখন কত মেয়ে পি এইচ ডি করছে।
যতই বলুক প্রভঞ্জন, ওর কি ভালাে লাগে নাকি? নিজেকে বােকা-ল্যাবা-ভোদা-মদনা-ল্যাদা বুদ্ধুর একটা ককটেল মনে হয়। ও মনে মনে কামনা করে, গাড়িটা বসে যাক, খারাপ হয়ে যাক। ওর কলেজের প্রিন্সিপালের গাড়ির ইঞ্জিনে শত্রুতা করে ওঁর ড্রাইভার নাকি চিনি ফেলে দিয়ে ইঞ্জিনটা খারাপ করে দিয়েছিল। প্রভঞ্জনেরও ইচ্ছে হয় এরকম একটা দুষ্টুমি করতে। কিন্তু ইঞ্জিনের ঠিক কোথায় ফেলতে হয় জানে না প্রভঞ্জন। নাতাশা ওর পার্লারে যায় বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ। তখন প্রভঞ্জনকে সঙ্গে করে নিয়ে আগে কলেজে নামিয়ে পরে পার্লারে যায়।
আজকাল প্রভঞ্জন মিথ্যে কথা বলছে। কখনও বলছে সকাল সকাল যেতে হবে, স্পেশাল ক্লাস আছে, কখনও বলছে আজ দেরি করে যাব। নাতাশা বােঝে, প্রভঞ্জন এড়িয়ে চলছে। বিছানাতেও। নাতাশা প্রভঞ্জনকে অঞ্জন বলে ডাকে। একদিন নাতাশার সঙ্গে প্রভঞ্জনের এরকম বাক্য চালাচালি।
নাতাশা।। অঞ্জন, তুমি আজকাল কেন এমন কর!
প্রভঞ্জন।। কী করি? নাতাশা।। কাছে আসাে না, গায়ে ঘেঁষাে না। বর-বৌ যা করে, কতদিন করাে না। কী যেন ভাবাে। কী ভাবাে? বেবি?
প্রভঞ্জন।। আমি অঙ্ক ভাবি।
নাতাশা।। আমিও তাে অঙ্ক ভাবি।
প্রভঞ্জন।। সে কী ?
নাতাশা।। কেন? অঙ্ক কি তােমার একার? আমি বুঝি অঙ্কে মাথা দিতে পারি না?
প্রভঞ্জন।। তুমি অঙ্কে মাথা দিতে চাও? খুব ভালাে কথা।
তবে এই মাথা দিলাম। তােমার অঙ্কে। অঙ্ক মানে তাে কোল।
প্রভঞ্জনের কোলে মাথা দিল। তার পর বুকে টেনে নেয়া। তার পর ব্লু ফিল্ম লাইভ। এবং ঘন নিঃশ্বাস ও হাস্কি গলায় আমার অঙ্ক বেবি চাই, অঙ্ক বেবি।
চার
প্রভঞ্জনের বাবার একটা মাঝারি ধরনের সেরেব্রাল স্ট্রোক হয়ে যায়। বাড়িতে একটা আয়া রাখতে চায়। ওই আয়াটি একটু ঘটকালিও করে থাকেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে নাপিতানি দেখেছি, যারা অন্দরমহলে গিয়ে বউ-ঝিদের আলতা পরাত, নখ কেটে দিত, মুখে সর-বেসনও মাখিয়ে দিত, সে সময়ের ফেসিয়াল। অন্দরে যাওয়ার সুবাদে ওরাই ছিল সে সময়ের ঘটকি। ঘটকি শব্দটা ঘােটকীর মতাে শুনতে লাগে বলে আমরা ম্যাচমেকার বলব। আজকাল সেই ম্যাচমেকারের কাজকম্ম করে থাকে আয়ারা, আয়াটি প্রভজ্ঞনের দ্বিতীয় বােনটির জন্য একটা সম্বন্ধ আনল। পাত্র অ্যাবাকাস কোম্পানিতে চাকরি করে।।
অ্যাবাকাস মানে এক ফ্রেম অঙ্ক। আরবে এর উদ্ভব। ফ্রেমের মধ্যে সুতাে বাঁধা, সেখানে আগে পাথরের টুকরাে থাকত, আজকাল থাকে প্লাস্টিকের বল। অ্যাবাকাস দিয়ে যােগ বিয়ােগ গুণ ভাগ তাে বটেই, স্কোয়ার রুট, লগারিদমও বের করা যায়। বাইনারি অ্যাবাকাসই কম্পিউটারের আদিপুরুষ। অ্যাবাকাস-এর সঙ্গে জড়িত শুনে প্রভজ্ঞনের খুব লােভ হয়। অঙ্কের সঙ্গে একটা সম্বন্ধ হলে ভালােই। নিজের বিয়েটায় অন্য একটা অঙ্ক ছিল। সত্যি বলতে কি, লােভে পরেই বিয়েটা করে ফেলেছিল। একটা ফ্ল্যাট কিনে আর বােনের বিয়ে দিয়ে একদম বিত্তহীন হয়ে পড়েছিল। বিয়ে করলে ও বাড়িতে সঙ্কুলান হত না, তা ছাড়া মেয়েটা সুন্দরী ছিল। গালে টোল, দুটো প্রায় অ্যালজেবরা অঙ্কের সেকেন্ড ব্র্যাকেটের মতাে। একটা গরিব ঘরের ছেলের প্রতি মেয়েপক্ষের এতটা টান তাে শুধু অঙ্কের জন্য। ওরা অঙ্কপ্রেমী ছিল।
বিয়ের পর অল্প দিনের মধ্যেই প্রভঞ্জন বুঝেনিল এখানে অন্য অঙ্ক আছে। শ্বশুরমশাইয়ের কালাে টাকা সাদা করার জন্য প্রভঞ্জন একটা ইনটিগ্রাল ক্যালকুলাসের —- ফাংশানাল টুল। বাড়িটা মেয়ের নামে। মেয়েকে একটা বিউটি পার্লার বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওখানে বিউটি বানানাের মহিলাদের ভিড়টি তেমন নেই। এ সি চলছে। সত্যিকারের লাভ খুব একটা হয় না, কিন্তু লাভ দেখানাে হয়। সেই লাভের টাকাতেই যেন এই ফ্ল্যাট। এই গাড়ি। মি: বি ডি আর, মানে ভবদেব রাহা, মাননীয় শ্বশুরমশাই দু’হাতে উপার্জন করেন। যদি চার হাত থাকত, চার হাতেই করতে পারতেন। এত টাকা ব্যাঙ্কে রাখার উপায় নেই। সম্পত্তিও নিজের নামে খুব বেশি করা যাবে না। ঝুঁকি আছে। বেনামে করতে হয়। প্রভঞ্জন বুঝে যায়, ও হল একটা বিশ্বস্ত বেনাম।
প্রভঞ্জনের শ্বশুরমশাই বেশ জোরে জোরে কথা বলেন। একদিন মুখের ভিতরে একটা পুরাে মােমাে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন, বােয়লে বায়াজীবন, আমার লাকটা ফেবার করেছিল যখন ওসি ছিলাম, দুটো মােক্ষম পােস্টিং পেইছিলাম। খিদিরপুর আর বড়বাজার। তার পরে ড্রাগ-গাঁজা সেলে। এক কেজি হেরােইনের দাম জানাে? সেই দামের মধ্যে পুলিশও ধরা থাকে।
প্রভঞ্জন বুঝেছে, ওর শ্বশুরমশাইয়ের কাছে টাকা গায়ের ময়লা। ঘষে ফুঁ দিয়ে ফেলে দেয়ার। কী করবেন? কোথায় খরচ করবেন? ছােটবেলার পাটিগণিতের নল চৌবাচ্চার অঙ্কের চৌবাচ্চায় ছল করে জল ঢুকছে কেবল মােটা নল দিয়ে, বেরােবার নলটা সরু। চৌবাচ্চা উপচে পড়ছে। ভবদেব রাহার দিনযাপন অনেকটা এরকম।
প্রভাত ৬টা তিরিশ মিনিটে আড়মােড়া দেওন, অতঃপর বিকট আওয়াজে হাই উত্তোলন, হাইয়ের সঙ্গে দুগগা দুগগা উচ্চারণ, তলপেটের বায়ু নিঃসারণপূর্বক শয্যাত্যাগ। দন্তমঞ্জন, খালি পেটে একটি গ্যাস-অম্বল নিরােধক ক্যাপসুল সেবন, অতঃপর চর্বি নিবারণের জন্য গরম জলে পাতিলেবুর রস আধা চামচ মধুসহ সেবন। জগিং পায়জামা, ঢিলা শার্ট ও স্পাের্টস শু পরিধানপূর্বক মর্নিংওয়াক। সহ-মর্নিংওয়াক সঙ্গীদের সঙ্গে গুড মর্নিং আদানপ্রদান, সুগার, প্রেশার, কোলেস্টেরল সম্পর্কিত তথ্যাদির আদানপ্রদান, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, দেশের ভবিষ্যৎ এবং আগামী প্রজন্ম সম্পর্কে দুশ্চিন্তা জ্ঞাপন, ফিরে এসে চা, একটি বিস্কুট, খবরের কাগজ। নয়টায় স্নানান্তে আহার। দু’রকমের মাছ, এবং যখন যে মাছ দামি। এছাড়া শাকসবজি ও টক দই। গাড়ি এসে যায়।
স্ত্রীর কণ্ঠনিসৃত দুর্গানাম শ্রবণ করতে করতে গাড়িতে উপবেশন। অফিসে কী হচ্ছে না হচ্ছে আমাদের জানার কথা নয়, অফিস আসার পথেই সেবন করে ফিরলে একটু রাত হয়ে যায়, আগে ফিরলে সঙ্গে ফিশফ্রাই/কাটলেট/চাপ ইত্যাদি আসে। তার সঙ্গে কয়েকটি কাজুবাদাম ও দু-চার টুকরাে ফল-সহ সিংগল মল্ট স্কচ। কখনও সঙ্গীসাথীও থাকে। রাত্রে দুটো মাত্র রুটি। ডাক্তার বলে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যটা তাে রাখতে হবে। এবং লাল মাংস নয়। চিকেন। তবে রবিবারে মাটন ছাড়া হয়?
রবিবারের আর একটি অবশ্যকরণীয় কাজ হল— পাশবুক দর্শন ও এফ ডি ইত্যাদির হিসাব মেলানাে।
এই তাে অতিসাধারণ জীবনযাপন। এরকম জীবনযাপন কতই বা করা যায়? সন্তানও মােটে একটি। আরও একটি শখ ছিল, কিন্তু স্ত্রীর ডিম্বাশয়ে রােগব্যাধির জন্য ওসব উপড়ে ফেলতে হল। একটিমাত্র মেয়ে। বিলেত আমেরিকায় থাকা পাত্রকে কি জামাই করা যেত না?
আলবত যেত। কিন্তু চোখের সামনে দেখা যেত না যে।
নাতাশার কাছে ভবদেববাবু শুনেছিলেন যে প্রভঞ্জনের বােনের বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে এবং তাঁর জামাই বাবাজি চিন্তিত। ভবদেববাবু বললেন, আমি থাকতে চিন্তা কী? তােমার বােন, মানে নাতাশার বােন, আর নাতাশার বােন মানে আমার মেয়ে। কোনও চিন্তা কোর না। কারুক্কে কিছু বলার দরকার নেই, আমিও কারুক্কেকিচ্ছুটি বলব না। যা লাগে আমি দিয়ে দোব গুনে, ভালাে সম্বন্ধ যদি হয়, হাতছাড়া কোর না। কত ক্লাবকে টাকাপয়সা দি। এবারের পাড়ার পুজোয় ওরা বােম্বের আর্টিস দিয়ে ওপেনিং করে দিলাম। তিন লাখ। এরম একটা শুভ কাজে আমিই দিয়ে দোব। তুমি আমার নিজের লােক। আর তুমি হচ্ছ গে স্কলার লােক। ইন্টালিজেন্ট চ্যাপ। টাকাপয়সাগুলাে বেরুলে বাঁচি।
‘বেরুলে বাঁচি’ শব্দটা একটা কাক হয়ে প্রভঞ্জনের ফ্ল্যাটের জানালার গ্রীলে বসে থাকল।
পাঁচ
বােনের বিয়েটা বেশ ভালাে ভাবেই হয়ে গেল। মা-বাবা- বােন সবাই খুব খুশি হল। এমন দায়িত্ববান বড় ছেলে খুব কম সংসারেই হয়। কিন্তু ভবদেব রাহার মুখ নিসৃত সহজ সরল যে শব্দদুটি কাক হয়ে প্রভঞ্জনের ঘরে এসেছিল, ওরা সময় পেলেই প্রভঞ্জনের মাথা ঠোকরাতে
লাগলাে।
বােনের বিয়েতে সােনার গয়না গাটি এবং ফার্নিচারের টাকাপয়সা উনিই দিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের হল ভাড়াটাও। প্রভঞ্জন শুধু ক্যাটারারের খরচটুকু।।
আপনি এত খরচ করলেন-বলাতে উনি হাতের আঙুলগুলাে এমন নাড়ালেন যেন বলছেন ‘টাকাগুলাে গেছে-বাঁচা গেছে। যদি কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়, বাহ্যি আটকে থাকার পর নির্গত হয়ে গেলে যেমন বলে বাঁচা গেছে।
এইসব টাকাপয়সা গুলাে হল ‘বেরুলে বাঁচি’টাকা। বর্জ্য।
প্রভঞ্জনের মনে হতে লাগল ও নিজে সারা গায়ে ভবদেব বাবুর বাহ্য মেখেছে। এবং সর্বক্ষণ এরকম একটা বােধ কাজ করে গেল। মরার গুলির মত ধরে আছাড় মারলেও সেই বােধ মাথার চারিপাশে ঘােরে তবু সে বুকের চারিপাশে।
প্রভঞ্জন সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করে আমার গায়ে দুগন্ধ পাচছাে কোন? বাজে, বিচ্ছিরি, পায়খানার গন্ধ? ওরা বলে- কই, না তাে, সামান্য ঘামের গন্ধ পাচ্ছি, সে তাে সবারই থাকে। প্রভঞ্জন বলে কিন্তু পাচ্ছি। আমি আমার গায়ের গন্ধ আর সহ্য করতে পারছি না। প্রভঞ্জন বাড়িতে আলাদা শুতে লাগল। নাতাশা কে বলল আমার কাছাকাছি এসাে না। বমি করে ফেলবে। নিজের ছাড়া জামা কাপড় আলাদা করে রাখতে লাগল।
বাথরুম থুড়ি ওয়াশরুমে খুব ভালাে করে নিজেকে ওয়াশ করে প্রভঞ্জন। অনেকক্ষন সাবান মাখে। নাতাশাকে জিজ্ঞাসা করে বাজে গন্ধটা কি একটু কমেছে?
নাতাশা বলে তােমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল অঞ্জন? কতবার বলেছি তােমার গায়ে কোনও বাজে গন্ধ নেই। তােমার নিজের গন্ধই তাে, যেটা আমাকে পাগল করে দেয়। এসাে, কাছে এসাে অঞ্জন। প্রভঞ্জন আরও দূরে চলে যায়।
নাতাশা মনােবিদের কাছে নিয়ে যায়।
মনােবিদ প্রভঞ্জনকে জিজ্ঞাসা করে কবে থেকে নিজের গায়ে এরকম দুর্গন্ধ পাচ্ছে। প্রভঞ্জন বলে আমার বােনের বিয়ের পর থেকে। তারপর নানা প্রশ্ন। প্রভঞ্জন সব বলে।
তার পর নাতাশাকে ডেকে মনােবিদ বলে, আমি কী করে বলি এটা মনােরােগ। বরং এটাই তাে হওয়া উচিত ছিল। মানুষ ন্যায়অন্যায় বােধ হারাচ্ছে। ইনি হারাননি। এর আত্মধিক্কার হচ্ছে। খুব ভালাে লক্ষণ। লােকটিকে ভালােবাসুন।
নাতাশা ভালােবাসতে যায়। নানা রকমভাবে চেষ্টা করে। নানাভাবে প্রলুব্ধ করে। নানা রকম ছলাকলা করে। প্রভঞ্জনের চায়ে, দুধে কামাগ্নি, মদনাগ্নি ইত্যাদি ওষুধপত্র মেশায়, তবুও কিছু হয় না। প্রভঞ্জনের শরীর জাগে না। আবার মনােবিদের কাছে যায় নাতাশা। বলে, কিছু একটা করুন স্যার।।
মনােবিদ বলেন, আপনার হাজব্যান্ডের মধ্যে এমন কিছু আছে যা আগামী দিনের শিশুর মধ্যে এলে সবার ভালাে হবে। আপনি ওঁর কাছে সন্তান চান।
নাতাশা বলে, চেয়ে চেয়ে তাে মুখে ফেনা উঠে গেল। আমার বাবাই ভুল করেছিল, একটা আনস্মার্ট ল্যাবা ছেলেকে সিলেক্ট করে। শুধু অঙ্কের জন্য। জানেন, ওনলি ফর ম্যাথমেটিক্স। আমাদের বংশে ম্যাথমেটিক্স ইনট্রোডিউস করতে চেয়েছিল।
মনােবিদ বললেন, আপনি একটা কাজ করুন। একটা স্বপ্ন দেখুন। অন্তত স্বপ্ন ভাবুন। একটা নিস্পাপ দেবদূত। ডানাওলা শিশু। সে আসছে। সেই স্বপ্নটা ইনডিউস করুন ওর মধ্যে। আর বলুন- দুর্গন্ধটা আপনিও পাচ্ছেন। সেই দেবশিশু এসে দুর্গন্ধ দূর করে দেবে। এই স্বপ্নটা চিন্তা করতে করতে স্বপ্নটা দেখতে শুরু করল নাতাশা। তার পর সেই স্বপ্নবৃত্তান্ত রােজই বলতে লাগল প্রভঞ্জনকে। তার পর একদিন প্রভঞ্জনও স্বপ্ন দেখল একটি সুন্দর ফুটফুটে বালক, হাফপ্যান্ট, সাদা শার্ট প্যান্টের ভেতর গোঁজা। প্রভঞ্জনকে বলছে, বাবা, আমি দাদুনের সঙ্গে অঙ্ক অঙ্ক খেলব।।
প্রভঞ্জন দেখে ছেলেটা নাতাশার বাবার ঘরে। স্বামী বিবেকানন্দের মতাে দু’হাত বুকের উপর আড়াআড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে, দাদু,
অঙ্কটা মিলিয়ে দাও। তােমার মাইনে কত দাদুন?
ছেলেটা বলছে, হিসেব দাও।
ভবদেব রাহা হিসেব দিচ্ছেন বিড়বিড় করে। ছেলেটা বলছে, মিলছে না… মিলছে না…
ভবদেব রাহা বলছে, মিলছে না তাে ও কিছু না। এসাে সােনা, কোলে এসাে।
দু’হাত বাড়ায়।
বালকের কাধ থেকে ডানা বের হয়। বালক উড়তে থাকে, ঘুরতে থাকে। বলে, দুয়াে দাদুন দুয়াে…। অঙ্ক পারে-এ-এ না। তােমার কোলে যাবাে ও-ও না।
উড়ে উড়ে প্রভঞ্জনের কোলে বসে এই বালক।
এই স্বপ্নটাই ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখতে থাকে প্রভঞ্জন।
ও বুঝতে পারে, ওর গায়ের দুর্গন্ধ ক্রমশ কমে আসছে।
ওর শরীর জাগতে শুরু করে ফের।
সন্দীপ মুখোপাধ্যায় - “নাম কী? থাকো কোথায়? কোন ক্লাস অবধি... Read More
এদেশে সোনাকে স্থিতি এবং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।...
আমরা সবাই জানি যে ত্রিদেব বলতে ব্রহ্মাণ্ডের তিন প্রধান স্তম্ভকে...
লিপস্টিক আমার কাছে লিপস্টিক নয়। লিপস্টিক আমার কাছে প্রতীক। রং...
নাতাশা স্নান সেরে এসছে। সারাটা ঘরই এখন গন্ধস্নান করছে। একই...
পুলিশের উর্দিটা তখনও গা থেকে খুলিনি, সুসময়ী বলল, “তােমার জন্য...
শাে তখন জমে উঠেছে। শীতের সন্ধে। গায়ে ছিল হালকা জ্যাকেট।...
চা আর প্রজাপতি বিস্কুট। খাবার মধ্যে এই। কিন্তু কথা ছিল...
সকাল বেলাটা আজকাল বিজনের বেশ সমস্যার। থিতু হয়ে প্রভাত উপভােগ...
রিশপের ছবিগুলাে সব ফেসবুকে আপলােড করার পর কম্পিউটারের সামনে থেকে...
লােকে ‘ব্যোমকেশ’ নামে ডাকেন। নতুন নামকরণ হয়েছে ‘সােনা দা। এদিকে...